হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা এ বিপুল পরিমান স্বর্ণ উদ্ধারের।
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গত ১৬/০৭/২০২৩ খ্রি: তারিখে কাস্টম হাউস, ঢাকা ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা এ বিপুল পরিমান স্বর্ণ উদ্ধারের পৃথক ০২ (দুই) টি অভিযান পরিচালিত হয়। তার মধ্যে এক টিতে বিমানের সিটের নীচ থেকে দাবীদার বিহীন অবস্থায় প্রায় ২৫ (পঁচিশ) কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। অপরটিতে ৩.৩৩ (তিন দশমিক তিন তিন) কেজি স্বর্ণ চোরাচালান প্রচেষ্টায় যাত্রীর সংশ্লিষ্টতা থাকায় ফৌজদারী মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দুইটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পর্যায়ক্রমে অনুচ্ছেদ নং-০১ ও ০২ এ উপস্থাপিত। ১| জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টম হাউস, ঢাকা এর ডি-শিফট এর কর্মকর্তাগণ, কাস্টম হাউস, ঢাকা এর প্রিভেন্টিভ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এনএসআই কর্মকর্তাগণসহ একটি দল কর্তৃক ফ্লাইট নং EK-584 এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের এক পর্যায়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ উক্ত অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত অভিযান পরিচালনাকালে উক্ত দল কর্তৃক উক্ত এয়ারক্রাফট এর ইকনোমি ক্লাস এবং বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের সিট তল্লাশি করা হয়। বিমানবন্দরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল এর বি. শিফট তাদের নিজস্ব সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একইসময়ে একই এয়ারক্রাফট এ তল্লাশি অভিযান শুরু করায় কাস্টম হাউস, ঢাকা এর ডি-শিফট এর কর্মকর্তাগণ, কাস্টম হাউস, ঢাকা এর প্রিভেন্টিভ কর্মকর্তাগণ এবং এনএসআই এর কর্মকর্তাগণ সমন্বিতভাবে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনাকালে উক্ত এয়ারক্রাফট এর ইকোনোমি ক্লাসের সিট নং ৩৮ ই-৮ এবং ৩৮-এফ-৯ সিটের নিচে ১৬ টি নীল স্কচটেপে মোড়ানো ডিম্বাকৃতির বস্তু দেখতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে, বস্তুগুলোতে স্বর্ণ রয়েছে এবং এয়ারক্রাফটে এ ধরনের আরও বস্তু থাকতে পারে সন্দেহে আলোচ্য ফ্লাইটটির সকল সিটের তলাতে তল্লাশি চালানো হয়। ইতোমধ্যে আরও বেশ কিছু সিটের নিচে সমরূপ বস্তু পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ক্রাফটির বাথরুম ও অন্যান্য স্থানেও তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি সম্পাদনের পর কাস্টম হাউস, ঢাকা এর ডি-শিফট এর কর্মকর্তাগণ, কাস্টম হাউস, ঢাকা এর প্রিভেন্টিভ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এনএসআই এর কর্মকর্তাগণ ফ্লাইট নং EK-৫৮৪, তারিখঃ 16.07.20২৩ খ্রিস্টাব্দ, (অবতরনের সময় 23.27 ঘটিকা) এর সিট নং- ৩৮-ই হতে ৮ পিস, ৩৮-এফ হতে ৯ পিস, ৪০-ই হতে ১২ পিস, ৪২-ডি হতে ৬ পিস, ৪২- ই হতে ২পিস, ৪২-এফ হতে ৮ পিস, ৪২-জি হতে ৮ পিস, ২৮-বি হতে ২ পিস অর্থাৎ, মোট ৫৫ (পঞ্চান্ন) পিস এবং সমান্তরালে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল এর বি- শিফট কর্তৃক ২৭ ডি- হতে ১১ পিস, ২৭-ই হতে ১২ পিস, ২৭-এফ হতে ১০ পিস ও ২৭ জি- হতে ১০ পিস সহ সর্বমোট ৪৩ (তেতাল্লিশ) পিস স্বর্ণ অর্থাৎ সর্বমোট ৯৮ (আটানব্বই) টি নীল স্কচটেপে মোড়ানো ডিম্বাকৃতি বস্তু পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে, এতে কাচা স্বর্ণের ভেজা পেস্ট রয়েছে যার ওজন পাতলা পলিথিলিন এ মোড়ানো অবস্থায় জব্দকালীন সময়ে ২৭.৬০০ (সাতাশ কেজি ছয়শত গ্ৰাম) কেজি। জব্দকৃত কাচা স্বর্ণের ভেজা পেস্ট জনাব তন্ময় নন্দী, নন্দী জুয়েলার্স, ঠিকানা: ইস্টার্ন বনবিথী শপিং কমপ্লেক্স, দক্ষিন বনশ্রী, রামপুরা,ঢাকা-১২১৯, ঢাকা কর্তৃক কষ্টি পাথর ও এসিড দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ২৪ ক্যারেটপেস্ট আকৃতি স্বর্ণ ২৭,৬০০ (সাতাশ কেজি ছয়শত গ্রাম) কেজি পাওয়া যায়। তবে, স্বর্ণ পরীক্ষাকারী তন্ময় নন্দী, নন্দী জুয়েলার্স এর বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী কাচা স্বর্ণের ভেজা পেস্ট এর ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গ্রামে ৯.৫০ গ্রাম হতে ১০.০০ গ্রাম তরল বাস্পীভূত হওয়ায় জব্দকৃত স্বর্ণের ওজন হ্রাস পেতে পারে। বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী এক্ষেত্রে তরল বাস্পীভূত হওয়ার পর জব্দকৃত স্বর্ণের ওজন দাড়াবে আনুমানিক ২৫ পঁচিশ কেজি যার আনুমানিক মূল্য ২৫ (পঁচিশ) কোটি টাকা।তল্লাশি অভিযান পরিচালনাকালে জব্দকৃত স্বর্ণ পরিবহণের সঙ্গে আপাতত: কোন যাত্রীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে বিমানের সিটের নিচে লুকায়িত অবস্থায় স্বর্ণ আনয়ন/পরিবহণের এহেন কার্যকলাপ The Customs Act, 1969 এর Section 2 (s) (b) অনুযায়ী চোরাচালান হিসেবে বিবেচিত এবং একই আইনের Section 15 এবং 16 অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধ। যা একই আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তযোগ্য। ২। গত ১৬/০৭/২০২৩ ইং তারিখ কমিশনার, কাস্টম হাউস, ঢাকা এর নিকট হতে প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আনুমানিক বিকাল ৬:১৫ ঘটিকায় দুবাই হতে আগত ফ্লাইট নং Ek-586 এ কাস্টম হাউম, ঢাকা এর প্রিভেন্টিভ টীমের কর্মকর্তাগণ বোর্ডিং ব্রিজে অবস্থান গ্রহণ করেন। উক্ত ফ্লাইটের ০৩ (তিন) জন যাত্রী যথাক্রমে (১) জনাব মশিউর রহমান রুবেল, ঠিকানা: বাগেরহাট; (২) জনাব জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকানা: মুন্সিগঞ্জ এবং (৩) জনাব আকবর হোসেন, ঠিকানা : নারায়নগঞ্জ -কে এসকট করে বোর্ডিং ব্রিজ হতে গ্রিন চ্যানেলে নিয়ে এসে আর্চওয়ে করা হলে তাদের শরীরে ধাতব পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদেরকে এক্স-রে করানো হলে তাদের রেকটামে ডিম্বাকৃতির ধাতব পদার্থের আছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। পরবর্তীতে, বিমানবন্দরে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে যাত্রীদের নিকট হতে ৩.৩৩ কেজি স্বর্ণের পেস্ট, ৩৪৮ গ্রাম ওজনের ০৩ (তিন) টি স্বর্ণের বার এবং ৩০০ (তিনশত) গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয় যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩,৪০,০০,০০০ (তিন কোটি চল্লিশ লক্ষ) টাকা। পরবর্তীতে উক্ত যাত্রীদের বিরূদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরপূর্বক বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।